পোস্টগুলি

পাবলিক বাসে একদিন

দেড় ঘন্টা যাবত থানায় বসে আছি। অফিসার ইন চার্জ থানায় নেই। ডিউটি অফিসার বললো, "ওসি স্যার আসলে কথা বলে তারপর যাবেন।" আমি একা না, সাথে আরেকজন আছেন। তাকে চিনি না, আজকের আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না। ঝামেলাটা তার আর আমার মধ্যেই। শুরু থেকে বলি তাহলে, ঘন্টা দেড়েক টিএসসিতে আড্ডা দেওয়ার পর বাসার উদ্দেশ্যে শাহবাগ আসি। কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর বাস আসলে উঠে পরি। মাঝের সারির একটা সিটে বসি। পাশেই একজন ভদ্রলোক বসেছিলো। বয়স কত হবে ৩০/৩২। দেহের গড়ন বেশ রুষ্টপুষ্ট, উচ্চতায় কম। ভাবছেন এই ভদ্রলোকের বর্ণনা কেন দিচ্ছি? একটু অপেক্ষা করুন, সব টের পাবেন। কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর বাস চলতে শুরু করলো। ঢাকার বাসে ড্রাইভারদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্টপেজে না দাঁড়ালে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। তাই তারা প্রতি স্টপেজে এমনকি রাস্তার মাঝখান থেকেও বাসে যাত্রী তুলে। যাগকে সে কথা, ড্রাইভারদের নিয়ে অন্যদিন বলা যাবে। বাস পরীবাগ পাড় হতেই পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম। এক ছোটভাইয়ের সাথে কিছু জরুরি কথা ছিলো। ম্যাসেঞ্জার ওপেন করে অনলাইনে পেয়ে মেসেজ লিখা শুরু করলাম। আমার পাশের ভদ্রলোক আমার মোবাইলের স্ক্রিনে অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে আছে। আ

নিষিদ্ধ পল্লিতে একদিন- ১

হটাৎ পাশের ঘর থেকে কিছুটা চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছিলো, রেইনা বললো, -আপনে বহেন, আমি দেইখা আহি কি হইলো। কিছুক্ষণ বাদে সে ফিরে আসলো, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো -নতুন মাইয়া, আইজকোই পত্থম কামে নামছে। সইহ্য করতে পারে নাই, বেহুশ হইয়া গেছে। বেচারি, পুরা টাহাডাই মাইর। সবারই পত্থম পত্থম এমন সমস্যা হয়। আস্তে আস্তে সব ঠিক হইয়া যায়। -আপনার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো? বলবেন নাকি? -অহন যেই মাইয়ারা আহে ওগো মত আমরা ছিলাম না। আমাগো শরীলে বল আছিলো। আমরা গেরামের তাজা সব্জি, মাছ খাইয়া বড় হইছি। এহনকার মাইয়ারা তো ফর্মালিন দেওয়া জিনিস খাইয়া বড় হয়। শরীলে বল পাইব কইত্থে? এই কাম করতে শরীলে অনেক বল লাগে, আপনেরা বুঝবেন না। পান খাইবেন নি? -আমি পান খাই না। -ও, বিড়ি? -না, আমি সিগারেটও খাই না। -আমনেতো দেহি একেবারে ভদ্দরলোক, পান খান না, বিড়ি খান না, ছেমরি মানুষের নেশাও নাই। -পান, সিগারেট আমি বললাম, কিন্তু মেয়ে মানুষের নেশা নেই কি করে বুঝলেন? -ওমা, বুঝুম না কেন? এই জাগায় আইছেন, খালি লেখালেখি করার লাইজ্ঞা। অন্য কিছুতে তো আমনের নজর দেখলাম না। -আমি নজর দিলেও আপনি বুঝবেন কি করে? -বুঝা যায় মিয়া, কত মানুষ চড়ায়া খাইছি হারা

মতিভ্রম

সারা বিশ্ব মাতিয়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এর প্রভাবে ২০২০ সালের মার্চেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ফলে আবাসিক হলগুলোও বন্ধ হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারে কাছে ছুটে যায়, আমার বেলায়ও ঠিক এমনটাই। তবে আমাকে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়নি। বাবা-মা ঢাকায় থাকার দরুন লকডাউনের শুরু থেকেই ঢাকায় ছিলাম। মাঝে এক-দুবার হলে গিয়েছিলাম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ কিছু জামাকাপড় আনতে। কিছুদিন আগে হলের বন্ধু হুমায়ূন কল করে, ওর কিছু বইপত্র ছিলো আমার কাছে, সেগুলো লাগবে। বইগুলো হলে রেখেই চলে এসেছিলাম। আবার হলে যেতে হবে সেগুলো আনতে। তাই আজকে দুপুর দিকটায় বাসা থেকে বের হই হলে যাওয়ার জন্য। হল গেটে এসে মামাদের কাছে হলকার্ড সহ আবেদনপত্র জমা দিয়ে হলে প্রবেশ করি। আমার রুমটা হলের মাঝখানের ব্লকে, ৩৪১ নম্বর রুম। হলের মাঝের ব্লকে থাকায় যেমন বাতাস বয়ে যেত আমার রুম দিয়ে ঠিক তেমনি ধুলোবালিও বয়ে যায়। রুমের তালা খুলতেই ধুলোঝাড়া বাতাস মুখে এসে লাগলো। ভেতরে ঢুকে বইপত্র গুছাতে লাগলাম । বই গুছাতে গুছাতে ভাবতে লাগলাম, কত স্মৃতি আছে এই রুমটায়। রাজনীতি, সুজনের পাগলামী, মেহেদীর থার্ড আই আর ভিডিও চ্যাটে কান্নার অভিনয় আরো কত কত কাহিনী।

গোধূলির প্রেম- ১

বন্ধুর আহবানে কিছুদিন অবকাশ যাপনের জন্য বি. বাড়িয়া এসেছি। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের খাউরপুর গ্রাম। ঢুকতেই গ্রামের রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত। তালগাছ, সুপারি গাছের শারি। কিছুদূর যাওয়ার পর ছোট-বড় কাচা-পাকা বাড়ি চোখে পড়লো। গ্রাম ছোট, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ছোট একটি খাল, যেটি বর্ষাকালে বিলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। একটি বড় খেলার মাঠ, মসজিদ ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এ গ্রামে। ছোট একটি স্পোর্টিং ক্লাবও রয়েছে। গ্রাম বলতে যা বুঝায় তার সব কিছুই বিদ্যমান। আমি আপন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করছি এবং সরকারী চাকুরী প্রত্যাশী। শহুরে যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু নিস্তার পেতে গ্রামের দিকে ছুটে চলা। আমার জন্ম গ্রামে হলেও থাকা হয়নি বেশিদিন। তাই সুযোগ হলেই ছুটি গ্রামের পানে। গ্রামের রাস্তার ধারে তীব্র বাতাসে সবুজের গন্ধে নিজেকে সঁপে দেই। হারিয়ে যাই আমি, এ যেনো স্বর্গেরই অন্যরূপ। যাইহোক, এখানে আসার আরো একটি কারণ আছে। এ গ্রামে বাড়ি বাড়ি ধান উঠে যাওয়ার পর একটি উৎসব পালিত হয়, ঠিক নবান্ন উৎসবের মত। এখানে গ্রামের মানুষের বাইরে কেউ থাকে না সচরাচর। সন্ধ্যা

একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও চা দোকানীর আত্মকাহিনী

  ঘটানা-০১ সফুর আলী, টানাপোড়েনের এ সংসারে তার একমাত্র জীবিকা নির্বাহের জন্য চা এর দোকানটিই তার কাছে দেবতা। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। নোয়াখালীর মাইজদীতে তার বসবাস। চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে তার সংসার চালানো অনেকটা কষ্টসাধ্য। তবুও বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই জীবনের পথে হাটতে হয়। সৃষ্টিকর্তার সাথে হয়তো তার পুরনো শত্রুতা রয়েছে। নইলে এতো এতো বিত্তবান মানুষ থাকতে সে কেন চায়ের দোকানী হবে। এ কথা ভাবতে ভবতে যখন সফুর দোকানের সামানে তাকালো তখন দেখল রাজিব তার ছোট ভাইদের নিয়ে দোকানে এসে বসেছে। সফুর কিছু বলার আগেই রাজিব বলে উঠল, -কি বুড়ো? ব্যবসা বানিজ্য করার ইচ্ছা নাই নাকি? -কি কও বাজান? ব্যবসা না করলে খাইমু কি? পোলাপানগো খাওয়াইমু কি? -তাইলে মাল-পাত্তি দেও না কেন? আমার আসতে হইলো কেন? -এই মাসে বাজান বেচাকিনি কম, কি করমু কও? কিস্তি চালাই তিনডা, ঘরে বউ, তিনডা পোলা একটা মাইয়া। -অত কথা শোনার সময় আমার নাই, এই মাস থেকে তুমি আরো ৫০০ বাড়ায়া দিবা। আর কোনো কথা নাই। সময় মত পৌছায়া যায় যেন। নইলে তুমি থাকবা তোমার দোকান থাকব না। বলে রাজিব চলে গেলো, সফুর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো, "আল্লাহ

জারজ

“ তুই তো একটা জারজ সন্তান” এ কথা শুনতেই রকির নাক বরাবর কষে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো মানিক। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেড় হতে লাগলো রকির নাক দিয়ে। মাঠে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। সাহিদ বললো, -কি করেছিস মানিক? এতো রক্ত বের হয়ে গেলো -বেশ করেছি , শালা আমাকে বলে ”জারজ”। খেলার মাঠে একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রকি আর মানিকের মধ্যে ঝগড়া বাধে। মানিক বল করে, ব্যাটে থাকা সাহিদ আউট হয়। কিন্তু আম্পায়ার হিসেবে দাড়ানো রকি বলে নো বল। ব্যাস অমনিই মানিকের মাথা গড়ম হয়ে যায়। তর্কের এক পর্যায় যখন রকি মানিককে “জারজ” বলে গালি দেয়, অমনি ঘুষি বসিয়ে দেয় মানিক। এতক্ষণে রকির বাড়ি খবর পৌছে গেছে। রকির দাদা চেয়ারম্যান। গত নয় বছর ধরে সে এ দায়িত্ব পালন করে আসছে। সে যখন শুনেছে তার নাতি খেলার মাঠে মার খেয়েছে, তখনই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসছে। দেখবে কার এত বড় কলিজা যে চেয়ারম্যানের নাতির গায়ে হাত তুলেছে। চেয়ারম্যান হামিদ সিকদার স্কুলে এসেই গেল হেডমাস্টারের রুমে। তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছেই হাক ছাড়লো যে, কার এত বড় সাহস যে সে তার নাতিকে মেরেছে। মানিক সামনে এসে বলল যে সে মেরেছে। মানিককে দেখতেই চেয়ারম্যানের মেজাজ বিগড়ে গেল। কিন্তু কিছু বলতে

ধর্ষকের আর্তনাদ

সনিয়াকে ফোন করে কাল সকালে ধানমন্ডি লেইকে আসতে বললো সাইফুল। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তাদের দেখা হয় না। সাইফুলের ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, এসাইনমেন্ট সব একসাথে থাকায় এই সপ্তহে দেখা করতে পারেনি তারা। সাইফুল রাজধানীর একটি সনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র। থাকে ধানমন্ডির সংকর এলাকায়। বাবা-মা ও বড় বোন সাহারা সহ তাদের একপ্রকার সুখী পরিবার। বাবা একটি রেস্টুরেন্টের মালিক। সনিয়ার সাথে সাইফুলের পরিচয় হয় ফেইসবুকের মাধ্যমে। সনিয়া ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী, বাসা জিগাতলা। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে রাজধানীর একটি কলেজে সে ভর্তি হয়েছে। ৩ বান্ধবী মিলে একটি সাবলেট বাসায় থাকে।  সনিয়ার সাথে ফেইসবুকে পরিচয় হয় সাইফুলের। এর একটা ইন্টারেস্টিং পটভূমি রয়েছে। তসলিমা নাসরিনের একটি বইয়ের রিভিউ নিয়ে একটি গ্রুপের কমেন্ট  সেকশনে তাদের মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গ্রুপ মডারেটর কমেন্ট সেকশন অফ করে দিলে সাইফুল সনিয়াকে সরাসরি মেসেজে নক দেয়। প্রায় ২ ঘন্টা তর্কের পরে তারা একমত হয়। এরপর তাদের মধ্যে হায়, হ্যালো চলতে থাকে। এভাবে প্রায় তিনমাস চলে। সাইফুল একদিন সনিয়াকে দেখা করার কথা বলে, সনিয়া ক্লাস