ধর্ষকের আর্তনাদ
সনিয়াকে ফোন করে কাল সকালে ধানমন্ডি লেইকে আসতে বললো সাইফুল। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তাদের দেখা হয় না। সাইফুলের ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, এসাইনমেন্ট সব একসাথে থাকায় এই সপ্তহে দেখা করতে পারেনি তারা। সাইফুল রাজধানীর একটি সনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র। থাকে ধানমন্ডির সংকর এলাকায়। বাবা-মা ও বড় বোন সাহারা সহ তাদের একপ্রকার সুখী পরিবার। বাবা একটি রেস্টুরেন্টের মালিক। সনিয়ার সাথে সাইফুলের পরিচয় হয় ফেইসবুকের মাধ্যমে। সনিয়া ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী, বাসা জিগাতলা। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে রাজধানীর একটি কলেজে সে ভর্তি হয়েছে। ৩ বান্ধবী মিলে একটি সাবলেট বাসায় থাকে।
সনিয়ার সাথে ফেইসবুকে পরিচয় হয় সাইফুলের। এর একটা ইন্টারেস্টিং পটভূমি রয়েছে। তসলিমা নাসরিনের একটি বইয়ের রিভিউ নিয়ে একটি গ্রুপের কমেন্ট সেকশনে তাদের মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গ্রুপ মডারেটর কমেন্ট সেকশন অফ করে দিলে সাইফুল সনিয়াকে সরাসরি মেসেজে নক দেয়। প্রায় ২ ঘন্টা তর্কের পরে তারা একমত হয়। এরপর তাদের মধ্যে হায়, হ্যালো চলতে থাকে। এভাবে প্রায় তিনমাস চলে। সাইফুল একদিন সনিয়াকে দেখা করার কথা বলে, সনিয়া ক্লাস টেস্টের কথা বলে এড়িয়ে যায়। কিন্তু তারও মনে মনে ইচ্ছা ছিলো দেখা করার। দুই সপ্তহ বাদে আবার সাইফুল দেখা করার কথা বলে। এবার আর না করতে পারল না সনিয়া। পরদিন ধানমন্ডি লেইকে তাদের দেখা হলো।
-কেমন আছো সনিয়া
-জি ভালো, আপনি কেমন আছেন?
- ভালো, চা খাবে?
-আমি চা খাই না
-সরোবরের এই চা টা খুব ভালো, খেয়েই দেখ
-মমম, ঠিক আছে
চা খেতে খেতে সাইফুল বললো
-ভার্চুয়াল জগত থেকে বাস্তবে তুমি আলাদা
-যেমন?
-ভার্চুয়াল জগতে মনে হয়ে খুব জেদী, সংগ্রামী এই টাইপের (হাসল)
-আর বাস্তবে?
-একেবারেই তেমন না
প্রায় এক ঘন্টা গল্প শেষে তার নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলো। সেদিন দেখা হওয়ার পর থেকে দুজনেই নিজেদের মধ্যে খুব আকর্ষণ অনুভব করতে লাগলো। দিন নেই রাত নেই, তাদের মাঝে কথা চলতে থাকে, প্রথমে মেসেজে, তারপর ভয়েস কল, এরপর ভিডিও কল। একটা সময় তাদের মধ্যে একপ্রকার অধিকারের সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেলো, যদিও সে অধিকার সমাজ স্বীকৃত না। ২০১৭ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সাইফুল সনিয়াকে প্রেমপত্র নিবেদন করল। সনিয়াও তাকে স্বাচ্ছন্দে গ্রহন করল। প্রায় এক মাস কেটে গেলো।
গত সপ্তাহে দেখা না হওয়াতে সকালে সনিয়াকে ধানমন্ডি লেইকে আসতে বলেছে সাইফুল। রবীন্দ্র সরোবরে দেখা করল তারা, সনিয়ার মনে হলো যে কত মাস তাদের দেখা হয় না। সাইফুল এই কয়দিন রাত জেগেছে বেশি, তাই চোখের নিচে কালো দাগ পরে গিয়েছে। সনিয়া আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো এত রাত জাগো কেন? কত বার বলেছি রাত জাগবা না। সাইফুল মৃদু হাসলো। একটি গাছের ছায়ায় বসে অনেকক্ষণ গল্প করল তারা। চলে আসার সময় সাইফুল সনিায়কে বললো কাল তার বেস্ট ফ্রেন্ড অর্নবের বার্থডে, সনিয়াকে নিয়ে তার বাসায় যেতে বলেছে সন্ধায়। সনিয়া সম্মতি দিলো না। মুড খারপ করে চলে গেলো সাইফুল। সাইফুলকে কষ্ট দিতে একটুও ভালো লাগে না সনিয়ার, রাতে অনেক চিন্তা করে সে সাইফুলকে মেসেজ দিলো যে সে যাবে। সাইফুল অনেক খুশি হয়ে সনিয়াকে বললো কাল যেন সে নীল শাড়ি পড়ে। সনিয়া জাবাব দিলো “আচ্ছা”।
পরদিন সন্ধা ৬টায় দুজন বের হলো। সাইফুল বললো চলো কিছু খাওয়া দাওয়া করে নেই। সনিয়া একটু অবাক হলো। ফ্রেন্ডের বার্থডেতে সেই বাসায় তো আয়োজন থাকার কথা। তাও সাইফুলের ক্ষুধা লেগেছে ভেবে তারা একসাথে খেলো। ৭টা ১৫র দিকে তারা সাইফুলের বন্ধুর বাসার সামনে পৌছাল। বাসা জিগাতলাতেই। কলিং বেল চাপতেই সাইফুলের বন্ধু দরজা খুলে দিলো। বাসায় ঢুকে সনিয়া আরো অবাক হলো, বার্থডের কোনো আয়োজনই তার চোখে পড়লো না। ভেতরে ঢুকতেই সাইফুলের বন্ধু অর্নব দরজা আটকে দিলো। সনিয়া সাইফুলকে জিজ্ঞেস করলো আর কেউ নেই কেন। এর জবাবে সাইফুল একটি পৌশাচিক হাসি দিলো। সনিয়ার আর কিছু বুঝতে বাকী রইল না। তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারল না। যাকে সে এতদিন ধরে দেবতাতুল্য ভেবে এসেছে শেষে কিনা সে…..উফ, ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। সনিয়া সাইফুলকে বললো সে বাসায় যাবে।
-এত তাড়া কেন বেবি?
-আমিওতো যাবো, একটু এনজয় করে নেই।
প্রায় এক ঘন্টা কেটে গেলো। সনিয়ার নিজেকে নিজের কাছে রাস্তার আবর্জনার মত লাগছে। মাথা নিচু করে সে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। নাহ, আজ আর সে নিজের বাসায় না। রাস্তায় কোনো গাড়ির নিচে নিজেকে সপে দিবে আজ।
সাইফুল একটা পৌশাচিক আনন্দের মেতে ছিলো। অনর্বকে বললো, হ্যাট্রিক করে ফেললাম মামাহ। সাইফুল তার ফোনের লক খলতেই দেখল তার বাবা ১১বার কল দিয়েছিলো। সাইফুল ফোন ব্যাক করেতই তার বাবা সাইফুলকে চিৎকার করে কাদতে কাদতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যেতে বলে। সাইফুলে মনের ভেতর বিদ্যুৎ চমকে যায়। সে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে???
উত্তরে তার বাবা বলল, জানোয়ারগুলো সাহারাকে বাচতে দিলো না, বাচতে দিলো নারে সাইফুল বাচতে দিলো না বাবা……..। সাইফুলের পায়ের নিচ থেকে সবকিছু সরে গেলো। সাইফুলের চিৎকার করে কান্না বের হলো, কিন্তু সে শব্দ শুধু সেই শুনতে পেলো, আর কারো কানে সে শব্দ পৌছালো না। তার মনে হলো তার বুকের উপর দিয়ে কেউ হ্যাম রোড রোলার তুলে দিয়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন