কেয়া

শালা দালাল” বলে আনোয়ারকে গালি দিয়ে খামার বাড়ির দিকে চলে আসলো কেয়া। সন্ধ্যে হতেই কাস্টোমারের আশায় সে সংসদ ভবনের সামনের দিকের ফুটপাতে দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ কোথা থেকে আনোয়ার এসে কেয়াকে বললো

-কিরে মা**, গত দুই দিন ধইরা ট্যাকা দেস না ক্যা? ট্যাকা ছাড়া পুলিশ কি তোর বাপে সামলাইবো?
-কয়দিন আগেই তো তোরে টাকা দিলাম, আবার আইছোস জ্বালাইতে?
-পুলিশের ট্যাকা, ভাইর টাক্যা আরো কত খরচ আছে? তোর কোনো ধারণা আছেরে মা**?? নিজেতো কয়ডা ট্যাকা দিয়া কাস্টোমার লইয়া ভাগোস।
-আমি আর টাকা দিতে পারুম না এই সপ্তায়
-তাইলে এইখান থিকা ভাগ মা**
একথা বলেই আনোয়ার কেয়াকে ধাক্কাতে লাগেলো। আনোয়ারদেরকে খুশি না করে এখানে দাড়ানো যাবে না। এই দিকটার সকল পুলিশি ঝামেলা ওরা দেখে। এদিকে কাস্টোমার পাওয়া যায় বেশি। কিন্তু আনোয়ারদের খুশি না করে এখানে থাকা সম্ভব না। তা্ই আনোয়ারকে গালি দিয়ে কেয়া খামার বাড়ির দিকে চলে এলো। ওদিক দিয়ে ইন্দিরা পার্কে বসলো। তার সামনেই দেখলো এক দম্পতিকে। সাথে একটা বাচ্চা, বয়স বছর চারের মত হবে। অনেক আগেই হয়তো ঘুরতে বের হয়েছে, এখন চলে যাবে।

একটু অন্যমনষ্ক হতেই কেয়া কেমন যেন নিজের ভাবনায় হারিয়ে গেলো। তখন বয়স মাত্র ১৭, কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মা ছাড়া কেয়ার আর কেউ নেই। বাবা মারা গিয়েছে তার জন্মের এক বছর পরেই। দুই চাচা এক হয়ে বাবার ভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয় তাদের। এরপর তার মা আসে তার নানু বাড়িতে। সেখানেই বড় হতে থাকে কেয়া। উচ্চ মাধ্যমিকেই সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। স্বপ্ন দেখে, বিয়ে করবে, সংসার হবে, শশুর-শাশুড়ির সেবা করবে। যার সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছে, সে গ্রামের মাতাব্বরের ছেলে। কেয়ার ভাব যেন অন্য রকম। কেনোই বা হবে না ভাব, পাচ গ্রামে তার মত এরকম সুন্দরী আর একটাও মেয়েও খুজে বের করা কষ্টসাধ্য।

হটাৎ কেয়ার মা অসুখে পরে মারা গেলো। আপন বলতে তার আর এ দুনিয়ায় কেউ রইলো না। কিছুদিন যেতে না যেতেই তার মামী তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করল। কেয়া বুঝতে পারল তার আর মামার বাড়িতে থাকা চলবে না। সে মেহেদীকে বললো তকে বিয়ে করতে। কয়েকদিন পর মেহেদী কেয়াকে বললো তার বাবা তাদের মেনে নেবে না। এখন উপায় কাউকে না জানিয়ে ঢাকা চলে যাওয়া। দিন তারিখ ঠিক করলো তারা। ঢাকা গিয়ে বিয়ে করবে, সংসার গড়ে তুলবে। সোনার সংসার, সে সংসারে শুধু সে আর মেহেদী থাকবে, আর তাদের সাথী থাকবে সুখ।

ঠিক সময়ে কেয়া মেহেদীর সাথে ঢাকা চলে আসলো। ফার্মগেটে একটা হোটেলে উঠলো। প্রায় এক সপ্তাহ তারা সেখানে থাকলো। এর মধ্যে সে যতবার মেহেদীকে বিয়ের কথা বলেছে, ততবারই মেহেদী এড়িয়ে গিয়েছে। এক সপ্তাহ পর হোটেলবয় রুমে এসে রুম ফাকা করতে বললো। কেয়া অবাক হলো। সে মেহেদীকে রুমে না পেয়ে হোটেলবয়কে জিজ্ঞেস করলো তার স্বামী কোথায়? হোটেলে উঠার সময় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলো। হোটেলবয় তাকে বললো , ”সে সকালেই হোটেল থেকে চলে গিয়েছে।” কেয়ার মাথায় যেন অকাশ ভেঙ্গে পরলো।

”ঐ, যাবি নি?” একথা শুনতেই কেয়া কল্পনা জগত থেকে ফিলে এলে। মধ্যবয়সী একটা লোক, কাচা-পাকা চুল, ক্লিন শেভ করা, ফর্মাল প্যান্ট-শার্ট ।
কেয়া বললো,
-হ যামু
-কত?
-১৫০০/-
-শালীর ডিমান্ড কিরে বাবা, ১৫০০ দিয়াতো গুলশানেই যাইতে পারি।
-তাইলে গুলশানেই যান
-১৫০ পাবি, রুম খারচ আমার , খুশি করতে পারলে আরো ১০০ বাড়ায়া দিমু
কি একটা চিন্তা করে কেয়া বললো, “চলেন”

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আত্মহত্যা

অনিদ্রিতা

প্রাক্তন