পোস্টগুলি

স্যুট

 এই হতোচ্ছাড়া কামালটা কোথায় গেলো। সকালেই তো দেখলাম দোকান খোলা। একটাই স্যুট ছিলো, তাও আয়রন করতে দিয়ে গিয়েছি ওর কাছে। এদিকে টিএসসি থেকে বার বার ফোন আসছে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে অনুষ্ঠান শুরু হবে। বিশেষ অতিথির ব্যক্তব্য দেওয়ার কথা আমার। কী যে করি! কামাল আমাদের গলির লণ্ড্রী দোকানদার। গলিতে আরো দুটো লন্ড্রী দোকান থাকলেও কামাল আমাকে বেশ সমীহ করে। দেখা হলেই বলে, "কী খবর সৌমিকদা? দেশের খবর ভালো?" আমি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলি, "তুই হতোচ্ছাড়া দেশের খবর দিয়ে কী করবি? কাপড়ের ভাঁজ ঠিক কর।" কিন্তু উপরি উপরি এমন ভাব করি যেন ওর প্রশ্ন শুনে আমি বেশ খুশি। দেশের দুই একটা কথা শুনিয়ে সকাল-বিকেলের চায়ের খরচাটা কামালকে দিয়ে দেওয়াই। আমি দোকানে আসলেই এক কাপ চা এনে দেবে। তাই ওর কাছেই জামা কাপড় ধোয়া থেকে আয়রনের কাজ করানো হয়। কিন্তু আজ হঠাৎ কামাল উধাও। পাশের সেলুন থেকে কামালের নম্বরটা নিয়ে কল দিলাম। ফোন রিসিভ করতেই বললাম, "কামাল, তোমার সৌমিক দা বলছি। কোথায় তুমি হে? আমার স্যুটটা যে লাগবে।" কামাল একটু গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো, "সৌমিকদা, আমি হাসপাতালে আইছি। আমার বউয়ের বাচ্চা অইব। স্যুট

পায়েল

পেটের দিকে তাকিয়ে মাহবুব সাহেব বললেন, "মাসুম ভাই, আপনার পেট তো দিন দিন মহাদেশ হয়ে যাচ্ছে!" একথা শুনে আমি একটা বিদঘুটে হাসি দিলাম। তিন বছর হলো সরকারি দপ্তরে কেরানির চাকুরি করছি। চাকুরিতে ঢুকার মাস ছয়েক পর থেকেই টুকটাক ঘুষ খাওয়া শুরু করলাম। এখন পুরোদমে ঘুষ খাই। এই চাকুরির জন্য বাবার রেখে যাওয়া তেরো লক্ষ টাকা বলি দিতে হয়েছে।  সে টাকা তুলতে হবে তো! আর আমি তো ইচ্ছে করে ঘুষ খাই না। লোকজন দেয়, তাই আমি খাই। মোল্লারা খেলে হাদিয়া বলে, আমি খেলে ঘুষ!  বিয়ে করেছি দু'মাশ হলো। বউ দেখতে মন্দ না। তবে স্বভাব খারাপ। পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলে শুধু। হোটেলে খেতে বসলে ওয়েটারের সাথে শুরু করে দিবে। বাসের হেল্পার, বাসার দারোয়ান, গলির মুদি দোকানি, ধোপা, কেয়ার টেকার কেউ বাদ থাকে না। সবার সাথেই শালির কী ভাব! এটা দেখে আমার দাত খিটমিট করে উঠে। কিন্তু কিছু  বলতে পারি না। আমি অফিসে থাকলে আর কী কী করে খোদা জানে।  একদিন সাহস করে বিষয়টা মাহবুব সাহেবকে জানালাম। মাহবুব সাহেবের মতো জোচ্চোরের বউ নিয়মিত পর্দা করে। একাধিক পরকীয়র সাথে যুক্ত মাহবুব সাহেব। বউ কোনো দিনও টের পায়নি। বউ নিয়ন্ত্রণে পুরো অফিসে মাহবুব সাহেবে

চোখ

চাচার জোড়াজোড়ির কারণে নীলের সাথে দেখা করা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান ১ম বর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সায়ানা নীল। লম্বায় ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি, দেহের গড়ন হালকা-পাতলা। নাক উচু গায়ের রঙ দুধে-আলতা, অসাধারণ চোখ এবং সুকেশী। এমন সুন্দর মেয়ে কমই দেখা যায়। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়ার চার বছরের মাথায় প্রথম সারির একটি চাকরির সুযোগ পাই। জয়েন করতে না করতেই চাচা আমার বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন। তার কলিগের মেয়ে নীল, অফিসে বসেই বিয়ে পাকা করে ফেলেছেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগও দেননি। বললাম যে চাচা মেয়ের বয়স আমার চেয়ে অনেক কম, তাকে আমি চিনিও না আগে থেকে। আর আমার কিছু বলারও তো থাকতে পারে। উনি বললেন একবার দেখা করে তারপর যেন সিদ্ধান্ত নেই। হয়তো ভেবেছেন অমন চেহারা দেখে না করতে পারব না। অনিচ্ছা সত্বেও নীল এর নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করি। আগে থেকেই তাকে আমার নম্বর দেওয়া ছিলো। জিজ্ঞেস করলাম কবে ও কোথায় বসতে তার সুবিধা হয়। বললো আগামীকাল ও ধানমন্ডির একটি ক্যাফের এড্রেস মেসেজে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে ফোন রাখলো। আমাকে বিকেল ৫টায় থাকার কথা বলেছে নীল। আমি অনিতাকে ঠিক সাড়ে পাঁচটা নাগাদ একই ঠিকনায় আসতে বললাম। ভালো কথা, অনিতার পরিচয় দে

পাবলিক বাসে একদিন

দেড় ঘন্টা যাবত থানায় বসে আছি। অফিসার ইন চার্জ থানায় নেই। ডিউটি অফিসার বললো, "ওসি স্যার আসলে কথা বলে তারপর যাবেন।" আমি একা না, সাথে আরেকজন আছেন। তাকে চিনি না, আজকের আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না। ঝামেলাটা তার আর আমার মধ্যেই। শুরু থেকে বলি তাহলে, ঘন্টা দেড়েক টিএসসিতে আড্ডা দেওয়ার পর বাসার উদ্দেশ্যে শাহবাগ আসি। কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর বাস আসলে উঠে পরি। মাঝের সারির একটা সিটে বসি। পাশেই একজন ভদ্রলোক বসেছিলো। বয়স কত হবে ৩০/৩২। দেহের গড়ন বেশ রুষ্টপুষ্ট, উচ্চতায় কম। ভাবছেন এই ভদ্রলোকের বর্ণনা কেন দিচ্ছি? একটু অপেক্ষা করুন, সব টের পাবেন। কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর বাস চলতে শুরু করলো। ঢাকার বাসে ড্রাইভারদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্টপেজে না দাঁড়ালে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। তাই তারা প্রতি স্টপেজে এমনকি রাস্তার মাঝখান থেকেও বাসে যাত্রী তুলে। যাগকে সে কথা, ড্রাইভারদের নিয়ে অন্যদিন বলা যাবে। বাস পরীবাগ পাড় হতেই পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম। এক ছোটভাইয়ের সাথে কিছু জরুরি কথা ছিলো। ম্যাসেঞ্জার ওপেন করে অনলাইনে পেয়ে মেসেজ লিখা শুরু করলাম। আমার পাশের ভদ্রলোক আমার মোবাইলের স্ক্রিনে অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে আছে। আ

নিষিদ্ধ পল্লিতে একদিন- ১

হটাৎ পাশের ঘর থেকে কিছুটা চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছিলো, রেইনা বললো, -আপনে বহেন, আমি দেইখা আহি কি হইলো। কিছুক্ষণ বাদে সে ফিরে আসলো, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো -নতুন মাইয়া, আইজকোই পত্থম কামে নামছে। সইহ্য করতে পারে নাই, বেহুশ হইয়া গেছে। বেচারি, পুরা টাহাডাই মাইর। সবারই পত্থম পত্থম এমন সমস্যা হয়। আস্তে আস্তে সব ঠিক হইয়া যায়। -আপনার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো? বলবেন নাকি? -অহন যেই মাইয়ারা আহে ওগো মত আমরা ছিলাম না। আমাগো শরীলে বল আছিলো। আমরা গেরামের তাজা সব্জি, মাছ খাইয়া বড় হইছি। এহনকার মাইয়ারা তো ফর্মালিন দেওয়া জিনিস খাইয়া বড় হয়। শরীলে বল পাইব কইত্থে? এই কাম করতে শরীলে অনেক বল লাগে, আপনেরা বুঝবেন না। পান খাইবেন নি? -আমি পান খাই না। -ও, বিড়ি? -না, আমি সিগারেটও খাই না। -আমনেতো দেহি একেবারে ভদ্দরলোক, পান খান না, বিড়ি খান না, ছেমরি মানুষের নেশাও নাই। -পান, সিগারেট আমি বললাম, কিন্তু মেয়ে মানুষের নেশা নেই কি করে বুঝলেন? -ওমা, বুঝুম না কেন? এই জাগায় আইছেন, খালি লেখালেখি করার লাইজ্ঞা। অন্য কিছুতে তো আমনের নজর দেখলাম না। -আমি নজর দিলেও আপনি বুঝবেন কি করে? -বুঝা যায় মিয়া, কত মানুষ চড়ায়া খাইছি হারা

মতিভ্রম

সারা বিশ্ব মাতিয়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এর প্রভাবে ২০২০ সালের মার্চেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ফলে আবাসিক হলগুলোও বন্ধ হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারে কাছে ছুটে যায়, আমার বেলায়ও ঠিক এমনটাই। তবে আমাকে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়নি। বাবা-মা ঢাকায় থাকার দরুন লকডাউনের শুরু থেকেই ঢাকায় ছিলাম। মাঝে এক-দুবার হলে গিয়েছিলাম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ কিছু জামাকাপড় আনতে। কিছুদিন আগে হলের বন্ধু হুমায়ূন কল করে, ওর কিছু বইপত্র ছিলো আমার কাছে, সেগুলো লাগবে। বইগুলো হলে রেখেই চলে এসেছিলাম। আবার হলে যেতে হবে সেগুলো আনতে। তাই আজকে দুপুর দিকটায় বাসা থেকে বের হই হলে যাওয়ার জন্য। হল গেটে এসে মামাদের কাছে হলকার্ড সহ আবেদনপত্র জমা দিয়ে হলে প্রবেশ করি। আমার রুমটা হলের মাঝখানের ব্লকে, ৩৪১ নম্বর রুম। হলের মাঝের ব্লকে থাকায় যেমন বাতাস বয়ে যেত আমার রুম দিয়ে ঠিক তেমনি ধুলোবালিও বয়ে যায়। রুমের তালা খুলতেই ধুলোঝাড়া বাতাস মুখে এসে লাগলো। ভেতরে ঢুকে বইপত্র গুছাতে লাগলাম । বই গুছাতে গুছাতে ভাবতে লাগলাম, কত স্মৃতি আছে এই রুমটায়। রাজনীতি, সুজনের পাগলামী, মেহেদীর থার্ড আই আর ভিডিও চ্যাটে কান্নার অভিনয় আরো কত কত কাহিনী।

গোধূলির প্রেম- ১

বন্ধুর আহবানে কিছুদিন অবকাশ যাপনের জন্য বি. বাড়িয়া এসেছি। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের খাউরপুর গ্রাম। ঢুকতেই গ্রামের রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত। তালগাছ, সুপারি গাছের শারি। কিছুদূর যাওয়ার পর ছোট-বড় কাচা-পাকা বাড়ি চোখে পড়লো। গ্রাম ছোট, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ছোট একটি খাল, যেটি বর্ষাকালে বিলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। একটি বড় খেলার মাঠ, মসজিদ ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এ গ্রামে। ছোট একটি স্পোর্টিং ক্লাবও রয়েছে। গ্রাম বলতে যা বুঝায় তার সব কিছুই বিদ্যমান। আমি আপন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করছি এবং সরকারী চাকুরী প্রত্যাশী। শহুরে যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু নিস্তার পেতে গ্রামের দিকে ছুটে চলা। আমার জন্ম গ্রামে হলেও থাকা হয়নি বেশিদিন। তাই সুযোগ হলেই ছুটি গ্রামের পানে। গ্রামের রাস্তার ধারে তীব্র বাতাসে সবুজের গন্ধে নিজেকে সঁপে দেই। হারিয়ে যাই আমি, এ যেনো স্বর্গেরই অন্যরূপ। যাইহোক, এখানে আসার আরো একটি কারণ আছে। এ গ্রামে বাড়ি বাড়ি ধান উঠে যাওয়ার পর একটি উৎসব পালিত হয়, ঠিক নবান্ন উৎসবের মত। এখানে গ্রামের মানুষের বাইরে কেউ থাকে না সচরাচর। সন্ধ্যা