পায়েল

পেটের দিকে তাকিয়ে মাহবুব সাহেব বললেন, "মাসুম ভাই, আপনার পেট তো দিন দিন মহাদেশ হয়ে যাচ্ছে!" একথা শুনে আমি একটা বিদঘুটে হাসি দিলাম। তিন বছর হলো সরকারি দপ্তরে কেরানির চাকুরি করছি। চাকুরিতে ঢুকার মাস ছয়েক পর থেকেই টুকটাক ঘুষ খাওয়া শুরু করলাম। এখন পুরোদমে ঘুষ খাই। এই চাকুরির জন্য বাবার রেখে যাওয়া তেরো লক্ষ টাকা বলি দিতে হয়েছে।  সে টাকা তুলতে হবে তো! আর আমি তো ইচ্ছে করে ঘুষ খাই না। লোকজন দেয়, তাই আমি খাই। মোল্লারা খেলে হাদিয়া বলে, আমি খেলে ঘুষ! 


বিয়ে করেছি দু'মাশ হলো। বউ দেখতে মন্দ না। তবে স্বভাব খারাপ। পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলে শুধু। হোটেলে খেতে বসলে ওয়েটারের সাথে শুরু করে দিবে। বাসের হেল্পার, বাসার দারোয়ান, গলির মুদি দোকানি, ধোপা, কেয়ার টেকার কেউ বাদ থাকে না। সবার সাথেই শালির কী ভাব! এটা দেখে আমার দাত খিটমিট করে উঠে। কিন্তু কিছু  বলতে পারি না। আমি অফিসে থাকলে আর কী কী করে খোদা জানে। 


একদিন সাহস করে বিষয়টা মাহবুব সাহেবকে জানালাম। মাহবুব সাহেবের মতো জোচ্চোরের বউ নিয়মিত পর্দা করে। একাধিক পরকীয়র সাথে যুক্ত মাহবুব সাহেব। বউ কোনো দিনও টের পায়নি। বউ নিয়ন্ত্রণে পুরো অফিসে মাহবুব সাহেবের জুড়ি মেলা ভার। তিনি আমার দুঃখের কথা শুনলেন। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললেন, "আপনি খুব ভালো মানুষ ভাই। আমার বউ এমন করলে মাগীরে বাইন্দা পিডাইতাম!" আমি বললাম, "ভাই, মাত্র বিয়ে করছি। চাইছিলাম ডিভোর্স দিমু। কিন্তু কাবিন করছি এগারো লাখ টাকা। এত টাকা কইত্তে দিমু? চাকুরির বয়স মাত্র তিন বছর।"


মাহবুব সাহেব বললেন, "এক কাজ করেন। ডিভোর্স দিতে হইব না। আপনি রিলেশন করেন একটা। বউ বউয়ের মতো থাকুক!" আমি বললাম, "কী বলেন ভাই? এইডা কি সম্ভব। আর বউ টের পাইলে তো ঝামেলা হইয়া যাইব।" আমার কথা শুনে মাহবুব সাহেব চলে গেলেন। আমি বিষয়টা নিয়ে দুদিন ভাবলাম। এরপর বউকে শিক্ষা দিতে প্রেম করার সিদ্ধান্ত নিলাম। মাহবুব সাহেবকে ব্যাপারটা জানালাম। প্রেমিকা যোগাড় করার আবদার করলাম। মাহবুব সাহেব হেসে বললেন, "দাড়ান, দেখাতাছি ব্যাপারটা।"


সপ্তাহ খানেক বাদে মাহবুব সাহেব একটা মেয়ের নম্বর দিলেন। নাম ইসরাত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ইসরাতের সাথে দেখা করলাম। আমার চেয়ে কমপক্ষে পনেরো বছরের ছোট হবে। রুচি ছিলো না, কিন্তু বউকে শিক্ষা দিতে হবে। আমার একটা ক্লাস আছে। ইসরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বউতো থার্ডক্লাস লোকজনের সাথে কথা বলে। আস্তে আস্তে ইসরাতের সাথে কথা বলা শুরু হলো। মেয়েটা না কেমন! খালি রেস্টুরেন্টে খেতে চায়, দামি দামি কসমেটিকস কিনে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও না করতে পারি না। টাকা যায় যাক। বউকে তো শিক্ষা দিচ্ছি। যদিও সে টের পাচ্ছে না।


ইসরাতের প্রতি ভালো লাগা বাড়তে লাগলো। আজকাল রাতেও কথা বলতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু রাতে কথা বললে বউ টের পেয়ে যাবে। আবার মাহবুব সাহেবের দারস্থ হলাম। মাহবুব সাহেব বললেন, "বউ ঘুমাবে, আপনি বারান্দায় গিয়ে কথা বলবেন।" আমি বললাম, "কী যে বলেন না ভাই। বউয়ের ঘুম ভাঙলে তো আমাকে খুঁজবে। খুঁজতে খুঁজতে বারান্দায় গেলেই তো ধরা পরে যাব।" এবার মাহবুব সাহেব বললেন, "আর যদি আপনি আগেই টের পেয়ে যান আপনার বউ আসছে? তাহলে তো সামলে নিতে পারবেন, তাই না? আমি বললাম, "সেটা কীভাবে সম্ভব? আমি তো আর বারান্দা থেকে বেডরুমে চেয়ে থাকতে পারব না।" মাহবুব সাহেব বললেন, "আপনার চেয়ে থাকতে হবে না মাসুম ভাই। আপনার বউই আপনাকে জানিয়ে দিবে সে আসছে।" আমি বললাম, "রহস্য না করে খোলাখুলি বলেন ভাই।" মাহবুব সাহেব কানে কানে সব বুঝিয়ে দিলেন।


সন্ধ্যায় নিউ মার্কেট থেকে দুই জোড়া পায়েল কিনলাম। কিনে বাসায় আসলাম। বউয়ের চোখ দুটো ধরে বললাম, "সারপ্রাইজ" এরপর পায়েল গুলো দেখালাম। বউ বলল, "আল্লাহ, কত্ত সুন্দর।" এরপর আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম, "তুমি এগুলো সব সময় পড়ে থাকবা। যাতে করে আমি জানতে পারি আমার কলিজার বউটা কোথায় আছে!" এটা শুনে বউ একটা মুচকী হাসি দিলো। আমিও একটা মুচকী হাসি দিলাম। মনে মনে মাহবুব সাহেবকে বললাম, "আপনে একটা মাল মাহবুব ভাই। আপনে একটা মাল!"

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আত্মহত্যা

অনিদ্রিতা

প্রাক্তন