অনিদ্রিতা

 -অমন কামুক দৃষ্টিতে তাকিও না তো, ফাইয়াজ!

-আমার চোখের দোষ দিচ্ছ?
-তা নয় তো কি?
-চোখের সামনে আকাশ থাকলে চোখ তো বিশালতাই দেখবে।
-আর?
-সাগর থাকলে অথৈ জল, পাহাড় থাকলে ঘন জঙ্গল, ঝরণা থাকলে পাহাড়ের ক্রন্দন, মরুভূমি থাকলে প্রচণ্ড তাপদহ, সূর্য থাকলে তেজ, চাঁদ থাকলে কলঙ্ক, আর তুমি, তুমি থাকলে
-থাক থাক আর বলতে হবে না। ও আমি বুঝে গিয়েছি!
-কি করে বুঝলে?
-মেয়েরা সব বুঝতে পারে
-তোমরা ঈশ্বর না কি
-এইটুকুন বুঝতে ঈশ্বর হতে হয় না। আচ্ছা, তোমরা সব পুরুষরাই কি এমন?
-কেমন?
-নিজ অভিলাষের জন্য যাচ্ছেতাই বলতে পারো
-সব পুরুষের সাথে আমাকে মেলালে, অনিদ্রিতা?
-তবে? তুমি কি দেবতা?
-তারচেয়ে কম কিছু নই!
-তুমি তো মদ খাও!
-দেবতারা খায় না বুঝি? সোমরস, বারুণী, কিলালা, মাসারা, মদিরা এসব কারা খায়?
-তুমি তো মেয়ে দেখলে পাগল হয়ে যাও।
-মুগ্ধতাকে পাগলামো বলছো?
-কামাতুর হয়ে যাও। তোমার ভেতর রাবণ জেগে উঠে।
-তোমায় কোনো দিন ছুঁয়ে দেখেছি?
-না
-তাহলে এমন অভিযোগ করলে কেন?
-তোমার দৃষ্টি ভালো না।
-আমার দৃষ্টি ভালো না? আর তোমার কাছে যারা আসে ওদের দৃষ্টি বুঝি খুব ভালো? ওরা যখন তোমার পবিত্র বক্ষের পাহাড় জোড়া কেরায়ায় নিয়ে ওখানে নিজের অস্থায়ী বাড়ি বানাতে চায়, তখন কি ওদের বিরুদ্ধে তোমার কোনো অভিযোগ থাকে?
-পবিত্র বক্ষ! ঠাট্টা করলে?
-ঠাট্টা কেন মনে হলো তোমার?
-যে বক্ষকে তুমি পবিত্র বলছো, সে বক্ষ কলঙ্ক বয়ে বেরাচ্ছে।
-কিসের?
-বিচরণের
-কি বিচরণের?
-অপবিত্র মগজ, দৃষ্টি, ভুজ আর ওষ্ঠ
-মসজিদ, মন্দিরে জুতা চোর, ঘুষখোর, সুদখোর, জোচ্চোর সবাই তো যায়। তাই বলে কি ওসব জায়গা অপবিত্র হয়ে যায়?
-ওসব স্রষ্টার ঘর
-তুমি তার সৃষ্টি
-সৃষ্টি না ছাঁই। দু'মুঠো খেয়ে পরে বাচতে লড়াই করতে হয়
-আমার কাছে চলে এসো
-তোমার কাছে যাব? তোমার সমাজ মেনে নেবে আমায়?
-সমাজের কাছে যেতে বলিনি
-তুমি কি সমাজের বাইরের কেউ?
-হা হা হা
-হাসলে কেন, ফাইয়াজ?
-দিনের আলোতে যে সমাজ নিয়ে তুমি চিন্তিত, রাতের আধারে সে সমাজ তোমার পাড়ায় ছুটে আসে। তোমাকে রাণী বানায়, কাছে টানে। তোমার হাতে সুরা পান করে। নেশায় বুদ হয়। মুখভর্তি সুরা নিয়ে ইবাদতের ভঙ্গিতে তোমার সর্বাঙ্গ চুম্বন করে। ক্লান্ত হয়, বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে। আবার সুরায় মুখ দেয়। দিনের আলোতে লুকিয়ে থাকা ভেতরকার রাবণকে জাগিয়ে তোলে। অতঃপর তোমার বক্ষ ভর করে স্বর্গীয় নৃত্যে মেতে উঠে!
-তুমিও তো রাতের আধারেই এসেছো
-আমার ভিন্ন কারণ আছে!
-কি কারণ?
-সূর্যের আলোয় যেমন চাঁদের খোঁজ পাওয়া যায় না, তেমনি দিনের বেলা তোমারও দ্যুতি ছড়ায় না
-সূর্যটা বুঝি তোমার প্রেমিকা?
-না অনিদ্রিতা, আমার সমাজ
-হা হা, অমন করে কি দেখছো?
-তোমাকে
-মিথ্যে কথা
-কেন?
-আমাকে দেখলে আমার চোখে তাকাতে। তোমার দৃষ্টি তো আমার বুকে উপর
-চোখে তাকানোর অধিকার এখনো পাইনি!
-বুকে তাকানোরটা পেয়েছো?
-ছিনিয়ে নিয়েছি
-তবে চোখেরটা নাও নি কেন?
-ওটা ছিনিয়ে নেওয়া যায় না, অর্জন করতে হয়।
-তা এতক্ষণ ধরে বুকে তাকিয়ে কি দেখছো?
-ডান স্তনের সামান্য উপরের কালশিটে দাগ
-এটা গত পরশুর। মাতালটা কিছু করতে না পেরে কামড় বসিয়ে দিয়েছে
-কামড়ের জন্য তো পয়সা দেয় না। অভিযোগ করতে পারো না?
-প্রথম প্রথম মাসীমাকে বলতাম। উনি আমলে নিতেন না। বলতেন, "গাধার স্বভাবই ঘোলা করে পানি খাওয়া। এইটুকুন তো সহ্য করতেই হবে।" এমন অনেকের স্ত্রী-প্রেমিকার শরীরের কালো দাগ আমাদের হজম করতে হয়। এ আর নতুন কি! বাদ দাও এসব কথা। গত বৃহস্পতিবার এলে না কেন?
-অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে ছিলাম
-একটাবার বলে গেলেও পারতে। সপ্তাহে ঐ একটা দিনই আমি ছুটি নিই। ঐ একটা দিনেরই তো প্রতীক্ষায় থাকি। সপ্তাহ জুড়ে প্রার্থনা করি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যেন বাঁচি।
-তুমি চাইলে বৃহস্পতিবারকে পুরো সপ্তাহ বানিয়ে দিতে পারি
-কি করে?
-আমার সাথে চলো
-ফাইয়াজ
-বলো
-আমি যে রাস্তায় হাটছি, সেটা একমুখী রাস্তা। তোমাদের ভাষায় ওয়ান ওয়ে রুট। এ রাস্তায় শুধু এগুতে হয়। ক্লান্ত হয়ে গেলে মাঝে মধ্যে রাস্তার ধারে বসে বিশ্রাম করা যায়। কিন্তু ফিরে আসা যায় না।
-গন্তব্যে যেতে মুসাফিরের কোনো রাস্তা অনুসরণ করতে হয় না। সে নিজের রাস্তা বানিয়ে নেয়।
-কিছু মুসাফিরের কোনো গন্তব্য থাকে না। তারা আমৃত্যু হাটে! শুক্র থেকে বুধ, পথে-প্রান্তরে, ঘৃণায়-বিদ্বেষে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আত্মহত্যা

প্রাক্তন