পোস্টগুলি

একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও চা দোকানীর আত্মকাহিনী

  ঘটানা-০১ সফুর আলী, টানাপোড়েনের এ সংসারে তার একমাত্র জীবিকা নির্বাহের জন্য চা এর দোকানটিই তার কাছে দেবতা। তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। নোয়াখালীর মাইজদীতে তার বসবাস। চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে তার সংসার চালানো অনেকটা কষ্টসাধ্য। তবুও বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই জীবনের পথে হাটতে হয়। সৃষ্টিকর্তার সাথে হয়তো তার পুরনো শত্রুতা রয়েছে। নইলে এতো এতো বিত্তবান মানুষ থাকতে সে কেন চায়ের দোকানী হবে। এ কথা ভাবতে ভবতে যখন সফুর দোকানের সামানে তাকালো তখন দেখল রাজিব তার ছোট ভাইদের নিয়ে দোকানে এসে বসেছে। সফুর কিছু বলার আগেই রাজিব বলে উঠল, -কি বুড়ো? ব্যবসা বানিজ্য করার ইচ্ছা নাই নাকি? -কি কও বাজান? ব্যবসা না করলে খাইমু কি? পোলাপানগো খাওয়াইমু কি? -তাইলে মাল-পাত্তি দেও না কেন? আমার আসতে হইলো কেন? -এই মাসে বাজান বেচাকিনি কম, কি করমু কও? কিস্তি চালাই তিনডা, ঘরে বউ, তিনডা পোলা একটা মাইয়া। -অত কথা শোনার সময় আমার নাই, এই মাস থেকে তুমি আরো ৫০০ বাড়ায়া দিবা। আর কোনো কথা নাই। সময় মত পৌছায়া যায় যেন। নইলে তুমি থাকবা তোমার দোকান থাকব না। বলে রাজিব চলে গেলো, সফুর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো, "আল্লাহ

জারজ

“ তুই তো একটা জারজ সন্তান” এ কথা শুনতেই রকির নাক বরাবর কষে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো মানিক। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেড় হতে লাগলো রকির নাক দিয়ে। মাঠে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। সাহিদ বললো, -কি করেছিস মানিক? এতো রক্ত বের হয়ে গেলো -বেশ করেছি , শালা আমাকে বলে ”জারজ”। খেলার মাঠে একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রকি আর মানিকের মধ্যে ঝগড়া বাধে। মানিক বল করে, ব্যাটে থাকা সাহিদ আউট হয়। কিন্তু আম্পায়ার হিসেবে দাড়ানো রকি বলে নো বল। ব্যাস অমনিই মানিকের মাথা গড়ম হয়ে যায়। তর্কের এক পর্যায় যখন রকি মানিককে “জারজ” বলে গালি দেয়, অমনি ঘুষি বসিয়ে দেয় মানিক। এতক্ষণে রকির বাড়ি খবর পৌছে গেছে। রকির দাদা চেয়ারম্যান। গত নয় বছর ধরে সে এ দায়িত্ব পালন করে আসছে। সে যখন শুনেছে তার নাতি খেলার মাঠে মার খেয়েছে, তখনই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসছে। দেখবে কার এত বড় কলিজা যে চেয়ারম্যানের নাতির গায়ে হাত তুলেছে। চেয়ারম্যান হামিদ সিকদার স্কুলে এসেই গেল হেডমাস্টারের রুমে। তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছেই হাক ছাড়লো যে, কার এত বড় সাহস যে সে তার নাতিকে মেরেছে। মানিক সামনে এসে বলল যে সে মেরেছে। মানিককে দেখতেই চেয়ারম্যানের মেজাজ বিগড়ে গেল। কিন্তু কিছু বলতে

ধর্ষকের আর্তনাদ

সনিয়াকে ফোন করে কাল সকালে ধানমন্ডি লেইকে আসতে বললো সাইফুল। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তাদের দেখা হয় না। সাইফুলের ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, এসাইনমেন্ট সব একসাথে থাকায় এই সপ্তহে দেখা করতে পারেনি তারা। সাইফুল রাজধানীর একটি সনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র। থাকে ধানমন্ডির সংকর এলাকায়। বাবা-মা ও বড় বোন সাহারা সহ তাদের একপ্রকার সুখী পরিবার। বাবা একটি রেস্টুরেন্টের মালিক। সনিয়ার সাথে সাইফুলের পরিচয় হয় ফেইসবুকের মাধ্যমে। সনিয়া ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী, বাসা জিগাতলা। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে রাজধানীর একটি কলেজে সে ভর্তি হয়েছে। ৩ বান্ধবী মিলে একটি সাবলেট বাসায় থাকে।  সনিয়ার সাথে ফেইসবুকে পরিচয় হয় সাইফুলের। এর একটা ইন্টারেস্টিং পটভূমি রয়েছে। তসলিমা নাসরিনের একটি বইয়ের রিভিউ নিয়ে একটি গ্রুপের কমেন্ট  সেকশনে তাদের মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গ্রুপ মডারেটর কমেন্ট সেকশন অফ করে দিলে সাইফুল সনিয়াকে সরাসরি মেসেজে নক দেয়। প্রায় ২ ঘন্টা তর্কের পরে তারা একমত হয়। এরপর তাদের মধ্যে হায়, হ্যালো চলতে থাকে। এভাবে প্রায় তিনমাস চলে। সাইফুল একদিন সনিয়াকে দেখা করার কথা বলে, সনিয়া ক্লাস

একজন ইশা ও প্রেমের অপমৃত্যু

গাড়ি থেকে নেমে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে সামাজিক বিজ্ঞান চত্বরে বসলো অনিক। সিগারেটে আগুন দিতেই ফিরে গেলো তার অতীতে। সময়টা ২০০৫ সাল। ফেব্রুয়ারী মাসের ৩ তারিখ, সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে উর্দু বিভাগে ভর্তি হয়েছে। মনটা খারাপ, ইংরেজীতে কম নম্বর পাওয়ায় এখন উর্দু পড়তে হচ্ছে। মন এজন্য খারপ না যে সে উর্দু পড়ছে, মন খারপ তার তার কলেজের বান্ধবী ইশার জন্য। ইশা ইংরেজী বিভাগে একই বর্ষে পড়শোনা করছে। কলেজে থাকতে তাদের মধ্যে একটা সখ্যতা গড়ে উঠে। কলেজে দুইজন আলাদা সেকশনে থাকলেও তারা দুজনেই মানবিকের শিক্ষার্থী ছিলো। নিজ সেকশনে তারা দুজন প্রথম ছিলো। তবে সম্মিলিতভাবে ইশা ছিলো প্রথম। ভেতরে ভেতরে একটা স্নায়ুযুদ্ধ চললেও উপরি উপরি তাদের বেশ ভাব ছিলো। যখন এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফল বের হলো তখন অনিক পেল ৪.৫০ অন্যদিকে ইশা পেল জিপিএ ৫.০০। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো ভর্তিযুদ্ধ। এখন ইশা ইংরেজী বিভাগের ছাত্রী অন্যদিকে অনিক উর্দুতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু সবাই নতুন বন্ধু তাই ইশাকে খুব কাছের মনে হতে লাগলো অনিকের। প্রাই তাদের নিয়মিত দেখা হত কলা ভবনের গেইটে। অনিক কথা বলতে চাইত কিন্তু ইশা তার ব্যস্

কেয়া

“ শালা দালাল” বলে আনোয়ারকে গালি দিয়ে খামার বাড়ির দিকে চলে আসলো কেয়া। সন্ধ্যে হতেই কাস্টোমারের আশায় সে সংসদ ভবনের সামনের দিকের ফুটপাতে দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ কোথা থেকে আনোয়ার এসে কেয়াকে বললো -কিরে মা**, গত দুই দিন ধইরা ট্যাকা দেস না ক্যা? ট্যাকা ছাড়া পুলিশ কি তোর বাপে সামলাইবো? -কয়দিন আগেই তো তোরে টাকা দিলাম, আবার আইছোস জ্বালাইতে? -পুলিশের ট্যাকা, ভাইর টাক্যা আরো কত খরচ আছে? তোর কোনো ধারণা আছেরে মা**?? নিজেতো কয়ডা ট্যাকা দিয়া কাস্টোমার লইয়া ভাগোস। -আমি আর টাকা দিতে পারুম না এই সপ্তায় -তাইলে এইখান থিকা ভাগ মা** একথা বলেই আনোয়ার কেয়াকে ধাক্কাতে লাগেলো। আনোয়ারদেরকে খুশি না করে এখানে দাড়ানো যাবে না। এই দিকটার সকল পুলিশি ঝামেলা ওরা দেখে। এদিকে কাস্টোমার পাওয়া যায় বেশি। কিন্তু আনোয়ারদের খুশি না করে এখানে থাকা সম্ভব না। তা্ই আনোয়ারকে গালি দিয়ে কেয়া খামার বাড়ির দিকে চলে এলো। ওদিক দিয়ে ইন্দিরা পার্কে বসলো। তার সামনেই দেখলো এক দম্পতিকে। সাথে একটা বাচ্চা, বয়স বছর চারের মত হবে। অনেক আগেই হয়তো ঘুরতে বের হয়েছে, এখন চলে যাবে। একটু অন্যমনষ্ক হতেই কেয়া কেমন যেন নিজের ভাবনায় হারিয়ে গেলো। তখন বয়স মাত্র ১৭,