প্রাক্তন

-কেমন আছো, সানায়া?

-যেমটা চেয়েছিলে!
-কেমন চেয়েছিলাম?
-আমি যেন সুখী হই
-হু, শুনেছি অনেক বড় বাংলোতে থাকো
-ভুল শুনোনি
-আচ্ছা, ওখানে কি জারুল গাছ আছে?
-না
-তুমি জারুল ফুল পছন্দ করতে
-এখন করি না
-রাধাচূড়া আছে?
-নেই
-কদম?
-ছিলো, কেটে ফেলেছি
-মিথ্যে বললে?
-কি মিথ্যে?
-তুমি সুখে আছো!
-আছিই তো
-জারুল, রাধাচূড়া, কদম এসব ছাড়াও তুমি সুখে থাকতে পারো?
-আমি তো তোমাকে ছাড়াও সুখে আছি
-তা হয়তো ঠিক
-জারুল, রাধাচূড়া, কদম এসব ছিলো বাহানা
-কিসের?
-তোমাকে কাছে পাবার
-কোনোদিন টের পাইনি
-তুমি অনেক কিছুই টের পাওনি
-বলতে না কেন?
-কতবার চেষ্টা করেছি, পারিনি। তোমার হাজারটা ব্যস্ততা আমার মুখে প্রলেপ এটে দিয়েছিলো।
-আচ্ছা, এখনো কি সেই অদ্ভুত স্যান্ডুইচ বানাও?
-না
-কেন?
-রেসিপি ভুলে গিয়েছি
-তুমি ভোলার মানুষ ছিলে না
-তুমিও তো ছেড়ে যাবার লোক ছিলে না
-তোমায় ভুল প্রমাণ করেছিলাম
-আমিও তোমায় ভুল প্রমাণ করলাম। আচ্ছা, বিয়ে করেছো?
-না
-কেন?
-ইচ্ছে করেনি
-তোমারা ছেলেরা ভাগ্যবান
-কি করে?
-ইচ্ছে না করলে বিয়ে না করেও থাকতে পারো। মেয়েরা এমন কিছু করতে পারে না।
-জানো, সেদিন ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম
-তারপর?
-সেই জারুল গাছটা আর নেই
-কেন?
-প্রবল ঝড়ে শেকড় উপরে গেছে
-আচ্ছা
-তোমার মনে আছে ঐ গাছটার নিচে আমরা বসতাম
-হ্যাঁ, তোমার একটা গিটার ছিলো। ভুলভাল সুরে বাজাতে
-আর তুমি বিরক্ত হয়ে উঠে যেতে। তারপর গিটার রেখেই আমি তোমার পিছু নিতাম
-হলগেট অব্দি চলে আসতে
-সমাজবিজ্ঞান চত্বর থেকে শামসুন নাহার হল, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পথচলা!
-ঐ রাস্তা নিয়ে তোমার এখনও আদিখ্যেতা আছে দেখছি
-আমার জীবনে ঐ একটা রাস্তাই ছিলো, সেটা হারিয়েছি আমি
-সে দায় কার?
-আমার
-যাক, এত বছর পর স্বীকার করলে
-বাধ্য হয়েছি
-কেন?
-বিবেকের তাড়নায়
-তাড়নাটা ছয় বছর আগে আসলে কি হত?
-বাদ দাও
-সেদিনও বাদ দিতে বলেছিলে। আচ্ছা, খুব বেশি কিছু কি তোমার কাছ থেকে চেয়েছিলাম, ফাইয়াজ? শুধু বাবার সাথে দেখা করতে বলেছিলাম। বাবা জানত আমাদের ব্যাপারে। তুমি তোমার ব্যস্ততা দেখিয়ে দেখা করলে না। বিয়ের আগেরদিন অব্দি আমি অপেক্ষায় ছিলাম, আসোনি। জানালার গ্রিল ধরে ভীষণ কেঁদেছিলাম সেদিন। অদ্ভুত ব্যাপার সে কান্নার আওয়াজ কেউ শুনতে পায়নি। আমি আর আমার ঈশ্বর বাদে সে আওয়াজ কারো কানে স্পন্দিত হয়নি। আমার অবস্থা ছিলো প্রবল ঝড়ে জাহাজ হারা অথৈ জলে ডুবতে থাকা নাবিকের মতো। মাঝেমধ্যে পত্র-পত্রিকায় দেখো না এক রাতে কৃষকের সব ধান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, সেদিন আমারও অন্তর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো। কৃষক যেমন পুড়ে যাওয়া ধানের ভষ্ম নিয়ে আহাজারি করে, আমিও তোমার স্মৃতি নিয়ে আহাজারি করেছিলাম। এক মুহুর্তে মনে হয়েছিলো, আমার পুকুরের চাষ করা মাছগুলোকে কে যেন বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলেছে। মেরে ফেলেছে মানে মেরে ফেলেছে।
-আমাকে ক্ষমা করে দাও
-হা হা, তোমার প্রতি এখন আর কোনো অভিমান, রাগ, ক্ষোভ কিচ্ছু নেই। তা এতদিন পর হঠাৎ কি মনে করে কল দিলে?
-ভীষণ শূন্য লাগে, ভীষণ একা আমি
-প্রত্যেকটা মানুষেরই এমন অবস্থা আসে। কারো আগে কারো পরে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়।
-সানায়া
-বলো
-আরেকটা বার ভালোবাসবে আমায়?
-ফাইয়াজ
-বলো
-একজন মানুষকে একবারই ভালোবাসা যায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আত্মহত্যা

অনিদ্রিতা