গাঁজাখোার ও ফাকবয়

 প্রচলিত জনমত আছে, "মেয়েরা শুধু গাঁজাখোর ফাকবয়দের পছন্দ করে।" সব গাঁজাখোর ফাকবয় হয় না। সব ফাকবয় গাঁজা খায় না। অনেক ফাকবয়কে দেখতে নিতান্ত ভদ্র, সুশীল, মার্জিত, গোছালো মনে হয়। আমার বন্ধু শ্রাবণ(ছদ্মনাম), একজন স্বীকৃত ফাকবয় (বন্ধুমহল কর্তৃক)। আমার মতে এ ব্যাপারে তাঁকে হোগওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া উচিত। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে জে. কে রাওলিংসের সংঙ্গে ফেইসবুকে যুক্ত নই। একারণে অনুরোধ করতে পারছি না। তাই ডিগ্রিটা আটকে আছে।


শ্রাবণ জীবনে একবার গাঁজা খেয়েছিল। গাঁজা খেয়েই না কি সেদিন সে আজরাইলের এপোয়েনমেন্ট পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় যা জ্যাম! সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে বের হয়ে গাবতলি যেতে যেতেই টাইম ওভার। ঐ যাত্রায় আজরাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি, তবে সাক্ষাতের আগের অনুভূতি শ্রাবণ আমাদের জানিয়েছিল। এ এক বিভৎস বর্ণনা। বর্ণনা শুনে ছোটভাই আব্দুর রহমান বলেছিল, "ভাই প্রথমবার এমন অনেকেরই হয়। আমিও প্রথম খাইয়া বমি করছিলাম। এহন তো প্যারা লাগে না।" ছোটাভাই একখান আমার। নাম আব্দুর রহমান, খায় গাঁজা। মাঝেমধ্যেই রাতবিরেত কল করে বলে, "ভাই একটা অন্যায় আবদার করমু, রাগ করবেন না।" একথা শুনেই আমি বুঝতে পারি মাল গাঁজা চাইছে। কিন্তু বারংবার আমার আব্দুর রহমান হতাশ হয়েছে।

যাইহোক, আমার বন্ধুর প্রসংঙ্গে আসি। তাঁর এক একজন প্রেমিকা দেখতে মাশাল্লাহ। প্রেমিকাদের কল্যাণে বন্ধুর ম্যাসেঞ্জার বলা যায় বেহেস্তের বাগান। মোটামুটি সরাবটুকু (শুভ্র উজ্জ্বল সুস্বাদু, অ্যালকোহল মুক্ত পানীয়) বাদ দিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্গীয় সুখ, মানসিক সুস্থতা সবই পাওয়া যায় ম্যাসেঞ্জার থেকে। এসব সুবিধা বন্ধু একাই ভোগ করে।

শ্রাবণের মধ্যে আমি এক অলৌকিক গুণ খুঁজে পেয়েছি। যেকেনো সুন্দরী, রূপবতী মেয়েকে খুব দ্রুত নিজের কাছের বানাতে পারে। টিএসসিতে এর প্রমাণ আমাকে কয়েকবার দিয়েছে। শ্রাবণের প্রেমিকায় রূপ নিতে একটা মেয়ে তিনটা স্টেজের মধ্য দিয়ে যায়।

প্রথম ধাপে, শ্রাবণের সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়। অধিকাংশই ম্যাসেঞ্জারে। মেয়ের কোনো একটা স্টোরিতে রিপ্লে দেওয়ার পর ফিরতি ম্যাসেজ আসলেই প্রথম ধাপ সম্পন্ন। দ্বিতীয় ধাপে এসে শ্রাবণ আর ঐ মেয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা কথা বলে। It's like, never ending conversation. এভাবে কিছুদিন কথা বলে মেয়েকে চ্যাটিং এ অভ্যস্ত করে ফেলে। বয়সে ছোট হোক বড় হোক, তাঁকে বন্ধু বানায়। একদিন হুট করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন হয়।

তৃতীয় এবং চূড়ান্ত ধাপ: হুট করে ম্যাসেজ বন্ধ করে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শ্রাবণ তাঁর নারায়ণী অস্ত্রের প্রয়োগ করে। এই অস্ত্রের উপাদান হিসেবে থাকে কিছু লাইন, যেমন: "তোমার প্রতি আমি উইক হয়ে যাচ্ছি তাই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি।" অথবা "আমি চাই না তোমার প্রতি আমার ইমোশোনাল এটাচমেন্ট তৈরী হোক, শেষে তোমাকে না পেয়ে দুনিয়াতে আমি মনঃকষ্টে ভুগি।" আবার "সম্পর্ক অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে গেলে কষ্ট কম হয় হ্যাশ ট্যাগ স্যাড।"

এই তৃতীয় স্টেজে এসে মেয়েগুলো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। শেষে সাত-পাঁচ ভেবে রাজি হয়ে যায়। কারণ শ্রাবণ সুদর্শন পুরুষ। শ্রাবণেকে দেখা মাত্রই আপনারা স্বীকার করবেন সে সুপুরুষ। কিন্তু সে গাঁজা খায় না অথচ ফাকবয়।

এদিকে আমার ছোটভাই আব্দুর রহমান। প্রায়ই গাঁজায় ডুব দেয়। মাঝেমধ্য ওর ফোন লোকেশন গুগল ট্র‍্যাক করতে পারে না। দেখা হলে যখন জিজ্ঞেস করি কোথায় ছিলি, দুপাটি দাঁত দেখিয়ে উত্তর দেয়, "গুরুদেব, রাতের আহার শেষ করিয়া একটু বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ভ্রমণ করিতে গিয়েছিলুম।" আমার পরের প্রশ্নই থাকে, "তা কতদূর গেলে?" তখন উত্তর দেয়, "খুব একটা দূর যাইতে পারিনি গুরুদেব, এই মঙ্গল অব্দি।" এমন উত্তর শুনলেই আমি বুঝতে পারি, গাঁজার মান ভালো ছিলো না।

এই আমার ছোটভাই আব্দুর রহমান, একজন নিয়মিত গাঁজাখোর। বছর সাতেক আগে তাঁর প্রথম প্রেমের বিচ্ছেদ হয়। এরপর আর প্রেম হয়নি। সম্প্রতি সদরঘাট সংলগ্ন একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক মেয়ের পেছনে ঘুর ঘুর করছিল। কিন্তু আব্দুর রহমানকে ঐ মেয়ে চেখেও দেখেনি। অথচ কত সুন্দর কবিতা বুনেছিল ঐ মেয়ের জন্য।

একারণেই বললাম, সব গাঁজাখোর ফাকবয় হয় না। সব ফাকবয় গাঁজা খায় না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আত্মহত্যা

অনিদ্রিতা

প্রাক্তন