তোমার আধ খাওয়া আপেল কিংবা আমার ছেড়া জুতো

 হঠাৎ কথা থামিয়ে সুজন রাজিবকে বললো, “ঐ দেখ, তোর ছোটবোন।” রাজিব সমাজবিজ্ঞান চত্বরের খিচুড়ির দোকানের দিকে তাকালো। এরপর একটা বিদঘুটে হাসি দিল। দোকানের পাশে চেয়ারে যে মেয়েটাকে রাজিব দেখেছে সে রাজিবের ছোটবোন না। সুজনের সাবেক প্রেমিকা, তৃষ্ণা। ছোটবোন বলার অবশ্য বিশেষ কারণ আছে। সে ব্যাপারে অন্য দিন আলোচনা করা যাবে।


আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তৃষ্ণার সঙ্গে সুজনের প্রায় দশবার দেখা হয়েছে। শ্যাডো, কলাভবন, সমাজ বিজ্ঞান চত্বর কোথাও বাদ নেই। এই ভর দুপুরে মেয়েটা সমাজবিজ্ঞান চত্বরে শাড়ি পরে বসে আছে। শাড়ির রঙটা কী? এই যাহ, রঙ চিনতে পারছে না সুজন! অবশ্য তার কোনো প্রয়োজনবোধও করছে না। তৃষ্ণা এখনও চোখে কাজল পরে। দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে। অবশ্য বেশ মানায়ও। দাঁত কেলাতে কেলাতে রাজিব বলল, “বন্ধু, সাবেক প্রেমিকার সামনে একটা বিড়ি না খাইলে কেমনে হইব?” কথাটা সুজনের মনে ধরল। অমনি উঠে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে টানা শুরু করল।

এতক্ষণে তৃষ্ণা সুজন আর রাজিবকে খেয়াল করলো। সেই জোড়া, তখন তৃষ্ণা কলেজ ছাত্রী। আর সুজন, রাজিব অর্নাস ১ম বর্ষের ছাত্র। সুজনই রাজিবের সঙ্গে তৃষ্ণার পরিচয় করিয়ে দেয়। সালটা কত, ২০১৭। স্থান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। তৃষ্ণার স্পষ্ট মনে আছে। রাজিব কিংবা সুজনের মনে আছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তৃষ্ণা। এসব ব্যাপারে পুরুষ মানুষের স্মৃতিশক্তি কাজ করে কম। সে যাই হোক, এখন তৃষ্ণা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর সুজন, রাজিব রা চতুর্থ বর্ষে পড়ে।

দূরে সুজন আর রাজিব হাসাহাসি করছে। এটা দেখে জায়গা বদল ডিইউ কফি হাটের দিকটায় এসে বসল তৃষ্ণা। সাহানের জন্য অপেক্ষা করছে। ছেলেটা চা আনতে এত সময় কেন নিচ্ছে তা ভেবে পাচ্ছে না। সাহান তৃষ্ণার ক্লাসমেট। একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বছর না যেতেই তা প্রেমের সর্ম্পকে রূপ নেয়। পড়াশোনা আর প্রেম এক জায়গাতেই হয়ে যায়। এতে অবশ্য একের ভেতর দুই কাজ হয়ে যায়। ব্যাপারটা এমন, প্রেমিকের রেজাল্ট খারাপ, প্রেমিকা তা ভালো করতে সাহায্য করে। দিন শেষে দেখা যায় প্রেমিক রেজাল্টের দিক দিয়ে প্রেমিকাকেও ছাড়িয়ে যায়। এমন ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আছে। তৃষ্ণা সাহানের এমন অবস্থা অবশ্য এখনও আসেনি। কারণ প্রেম হওয়ার পর তারা যে পরীক্ষা দিয়েছে তার ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি।

এখান থেকে সুজন আর রাজিবকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তৃষ্ণা। তারা অবশ্য তৃষ্ণাকে দেখতে পারছে না। রাজিব খুব প্রাণবন্ত, কিন্তু সুজন! সুজন হাসছে, কিন্তু সে হাসিতে কিছু একটার অভাববোধ করছে। এটা অবশ্য রাজিব বুঝতে পারছে না। দুজনে সেই প্রথম বর্ষের বন্ধুর মতো কথা বলছে, হাসছে। তৃষ্ণার সেই শহিদ মিনারের দিনের কথা মনে পড়ল। এমনই প্রাণবন্ত ছিল দুই বন্ধু। দুই বন্ধু না, আরো কয়েকজন ছিল সঙ্গে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যায়ে যত দিন যায়, বন্ধু কমে। এটাই এখানকার অমোঘ নিয়ম। সেদিন আরো যারা ছিল তারা এখনও আছে। তবে বন্ধু হিসেবে নয়। শহীদ মিনারের সামনের সিঁড়িতে তৃষ্ণা সহ সুজন, রাজিব সবাই বসেছিল। হুট করেই সুজন তৃষ্ণার গালে চুমু একে বসছিলো। একথা মনে করতেই তৃষ্ণা লজ্জা ঠোট কামড় দিয়ে বসলো। নিজের অজান্তেই হেসে ফেলল।

সুজনকে নিয়ে তৃষ্ণার ঘোর ভাঙল সাহান। দুই হাতে দুই কাপ লাল চা নিয়ে ঢ্যাব ঢ্যাব চোখে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “চা আনতে এতক্ষণ লাগে তোমার?” সাহান বলল, “কী করব, ঐ আংকেল কে টাকা দিলাম আগে যাতে আমাকে আগে দেয়। কিন্তু সে টাকা নিয়ে অন্যদের চা দেওয়া শুরু করল।” তৃষ্ণা বিরক্তির সুরে বলল, “হইছে হইছে, বসো তো। অনেকক্ষণ দাড়ায় আছো।” সাহান বসল। ব্যাগ থেকে দুইটা আপেল বের করল। তৃষ্ণার হাতে একটা দিল। নিজে একটা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করল। তৃষ্ণা বলল, “প্রত্যেক দিন আপেল নিয়ে আসো কেন? আর ভার্সিটিতে উঠে কেউ আপেল আনে খেতে?” “সাহান বলল, “সুস্থ মানুষের প্রতিদিন একটা আপেল খাওয়া উচিত। আপেল না খেয়ে সিগারেট খেলে ভালো লাগবে তোমার?” একথা শুনে তৃষ্ণা হেসে সাহানের গালে চিমটি।


এদিকে রাজিব আর সুজনের খোশ গল্প চলছে। রাজিব তৃষ্ণার প্রেমিককে দেখে বলল, “মাল তো তোর চেয়ে লম্বা। তোরে ছাইড়া তো জিতছে।” সুজন কিছু বলল না। রাজিব আবার বলল, “একটা কবিতা শুন,

“তুমি চলে গেছে রাখোনি আমার খেয়াল
তোমার প্রেমিকের হাতে আজ আধ খাওয়া আপেল।
তোমার জন্য করেছি আমি কত যে রায়েট
আজ আমার হাতে বেনসন সিগারেট”

এটা শুনে সুজন খিল খিল করে হেসে উঠলো।

টু বি কন্টিনিউড

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আত্মহত্যা

অনিদ্রিতা

প্রাক্তন